আপনার কথাগুলো এখানেই যায় যোগাযোগ Buy Now!

হাসেম জীবনী

বিশ শতকের শুরুর কাল,

উনিশ শত এগারো সাল।
জ্ঞান বিজ্ঞান করিয়া বশ,
বিশ্বে যখন জ্ঞানের যশ,
তুর্কিতে চলে খলিফা কাল,
ভারতবর্ষ ঢের উত্তাল,
এমন এক দিন শহীদনগরে,
জন্মিল শিশু বড়ই আদুরে,
ইমান আলী বলে পুত্রের নাম,
আবুল হাসেম, আমি রাখিলাম। 

সেবার দেশে চলিল প্রলয়,

আঁকড়ে ধরিলো প্রবল বলয়,
শুষ্ক হইলো ছাউনীর ছন
ভষ্ম করিল সকল আয়োজন,
করিছে শাসন জালিম রাজা,
খাজনা তুলিতে আসে পেয়াদা,
খাদ্যহীন এ বাংলার দুখ,
খাজনার তরে সন্ত্রাসী লোক,
পাঠায়েছে দেশে জমিদার,
চলিছে অত্যাচার।

বঙ্গ ভেঙেছে ঢাকা রাজধানী,

মুসলিমগন ছেড়ে মহাজনী,
ঢাকামুখী সব সভাসদ।
কার্জন লাট করিল অগত,
বাংলা ভঙ্গ রদ।


হাসেম তখন শিশু,

কুপি বাতি জ্বলে টিমটিম ঘরে,
হাসিখুশি মাতা পালিছে তাহারে,
সুস্থ্য স্বাস্থ্যবান।
ধীরে ধীরে তারে,
শাসন ও আদরে,
কাটাতেছে দিনমান।

বয়স তাহার দুইটি বছর হলো,

রবীন্দ্রনাথ নামে এক কবি,
নোবেল পাইয়াছিলো।

পরের বছর কাঁপিল বিশ্ব,

দারুন রণের ডাকে,
বিশ্ব দেখিল বিশ্বব্যপী,
যুদ্ধ বলে কাকে৷ 
ফার্দিনান্দ, সোফিয়ার লাগি,
আগুনে পড়িল গ্রহ,
দেখিল হিংস্র মানব জাতি,
কেও আর কারো নহ!

বছর যখন বারো,

পিতা ইমান আলী বলিল তাহারে,
এখন ব্যবসা করো। 
অল্প বয়েসী আবুল হাসেম,
বাণিজ্য করে বরমী,
বিদ্যালয়ে যায় নি কভু,
হৃদয় তবুও মরমী। 

যেত মল্লিক বাজার ভালুকা,
করিতে সোনার কারবার।

যৌবন কালে সোনালী আঁশের
দিল বানিজ্য সরকার৷
স্বর্ণবণিক পাটের ডিলার,
সত্য নিষ্ঠাবান।
যৌবনে গেল আত্মীয় বাড়ি, 
বিবাহ অনুষ্ঠান। 
লাবন্যময়ী বাল্যবয়েসী,
যুবতী সুশ্রী নারী,
কাড়িল হৃদয়,পুরুষ সিংহ
হাসেম দপ্তরী।
বলিলো না সেই মনের বাসনা,
লুকায়ে রাখিল মনে,
বলিলো কথাটি অভিভাবিকারে,
পছন্দ হলো কণে।

সলাজ মুখটি টকটকে মুখ,
আঙুল একটা বেশি,
বধু বেশে এলো হাসেমের বাড়ি,
শীতের শেষাশেষি। 

লজ্জাবতী করিমন নেসা,

বোর্ডস্কুল পড়া শেষ,
পড়ায় তাঁহার দারুন আগ্রহ,
বই পেলে লাগে বেশ।

ধর্মের বই পড়িয়ে পড়িয়া, 

কাটছে তাহার দিন,
সন্ধ্যা-রাতে ফিরিতেছে ঘরে,
হাসেম ক্লান্তিহীন। 

দেশে চলছে আন্দোলন,

সুর্যসেনেরা চাঁটগাও করে,
অস্ত্রের লুণ্ঠন!

জিন্না করে দ্বিজাতিতত্ত্ব, 

হক করছে চাষী খাতাক,
লাহোরে নাকি প্রস্তাব উঠছে,
পাকিস্তান ও হবে দুভাগ!

আবুল হাসেম দম্পতির আজ

খুলছে  খুশির দ্বার,
দেবশিশু এক জন্ম নিয়েছে,
আব্দুল জব্বার। 
নয়টি বছর বয়স তাহার,
মাখনের মত দেহ,
উন্নত শীর শিশুটিরে সবে,
বিলাইছে প্রীতি স্নেহ। 
একদিন ভোরে বাণিজ্যে যাবে,
আবুল হাসেম নিজে,
আজকে যেতে ইচ্ছা করে না,
হঠাৎ হইলো কি যে!
বলিল বৌয়েরে "শুন বৌ,
আমার জব্বার যেন আজ,
যায় না কখনো ঘরের বাইরে,
দেখে রাখা তব কাজ।
খোয়াব দেখেছি মধ্যরাতে,
গলুই গিয়েছে টুটি,
এই বাড়ি হতে কখনো আজিকে,
দিওনা ছেলেরে ছুটি!"
মধ্যদুপুর, বসন্তকাল,
রোদ্রালোকে বসি,
দুয়া ভাণ্ডার পড়ছে নারী,
তারকা পড়েছে খসি!

মা আমি যাব বিলে,

সাতার কাটবো এলাকার সবে মিলে!
বলিল মায়েরে হাসেমপুত্র,
গেল প্রফুল্ল দিলে!
ভুলিল রমনী আজকে ছেলেরে,
ছুটি দেওয়া ছিল মানা,
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে,
ছেলেটি ফিরে আসে না!

আবুল হাসেম, মনটা উদাস,

হস্তে সোনার থলে,
হন্তে দন্তে ফিরছে বাড়ি,
হঠাৎ কে যেন বলে!

"ওহে চাচা জান,

একটি রাজারপুত্র বাড়ির পাশে,
জলে সাতরিয়ে থৌরাইল বিলে,
চিরতরে ঘুমায়েছে!
শুনিয়া হাসেম সোনা আর টাকা,
জলে ছুড়ে দিয়ে হায়,
পাগলের মতো হাহুতাশ করে,
মাথা বিকৃতি পায়!

জব্বার ছাড়া আর কেও হায়,

ডুবেনি দারুন জলে,
শোকাহত এই দম্পতির এল,
মেয়ে সন্তান কোলে। 

সাতার জানা জব্বার ছেলে,

এমনি যায়নি মারা,
গলাতে ছিল সাত আনি হার,
সোনা ছিল হাত ভরা।
মৃত্যুর পর হস্ত খালি,
গলার চেইনটি নাই,
সাতারু ছেলেটি বলতো কিভাবে,
জলে ডুবে মারা যায়?
সঙ্গে ছিল সঙ্গীসাথী, 
সবার সামনে থেকে,
বিশালবপু গৌঢ় ছেলে,
সহসাই গেল চলে?

মেয়ে যমিলার পরে হলো ছেলে,

পরহেজগারী নাম,
আব্দুল লতিফ নাম রেখেছে,
জানিল সারা গ্রাম। 
তার পরে এলো আব্দুল আলীম,
তাপর আয়েশা কনে,
রবিউল আলম আসিয়া শেষে,
মিলিল সবার সনে।

অনেক শিশু, সুন্দর কাল, 

চলছে বিশ্ব ভ্রমে,
আবারো বাজিল ডঙ্কার সুর,
কাপিল এ দেশ রণে!

অর্ধশত পার হয়ে গেছে,

বঙ্গবন্ধু মুজিব ভাই,
মার্চে ভাষন হাসেম শুনেছে,
 মুজিব ডেকেছে সময় নাই।

হুক্কা টানার অভ্যাস তার,

ডাব্বা খেলায় সেরা,
প্রতি সপ্তাহে খাসি কাটা হয়,
বাড়ি ভরা লোকেরা। 

একদিন তিনি যাচ্ছেন হেঁটে,

৫০ সাল আগে,
সহসা ধর্মসভার শব্দ,
তার কানে এসে লাগে।
শুনিলো আলেম বলছে জোরে,
হুক্কা করিলে পান,
পরপারে তার কঠোর শাস্তি,
নরকের ফরমান!

সেইদিন তিনি গোসল সারিয়া,

তওবা করেন এই,
হুক্কা জীবনে না ছুয়ে আর,
জীবন কাটাবেই!
তার পর হতে আর কোনদিন,
স্পর্শ করেনি ধুম,
ফজরের তিনি বলেন সালাত,
খাইরুম মিন নৌম!

তখন যুদ্ধ চলছে দেশে

আশ্রিত হয়, গুড় মুড়ি খায় 
মুক্তিযুদ্ধা এসে।
স্বাধীন বাংলা বেতার শুনে,
নিয়মিত লোকজন,
বড় কাটরায় পড়িতেছে এই,
বাড়ির বড় জন।
লতিফ নামের দুরন্ত ছেলে,
বয়স পঞ্চদশ,
বাংলা উর্দু দুইভাষা জানে,
পারে জ্বীন ও করতে বশ!
একদিন তার আসিতে হইবে,
বাড়িতে অবশ্যই
ঢাকা হইতে পদব্রজে,
বাড়িতে যাত্রা হই। 
পথিমধ্যে বিহারী সেনা,
আঁটকে বললো "কিউ"
বলিল ছেলেটি, "আভি মোঝে তেরে,
অফিসার পাস লেও"
অফিসার দেখে তারে, 
বলিল, "কিয়া কার রাহা হ্যায়?"
"পড়ছি আমি ইলমে দ্বীন,
বাড়ি ফিরতে হবেই!"

ফিরিল হাটিয়া বাড়ি,

দেখিল এ দেশ মানুষের লাগি 
মানুষের আহাজারি। 


খাদ্য শুণ্য দেশে আসিল,

খাঁকি কাপড়ের দল।
শুন্য মাঠ, ভীত ক্রীড়াবিদ,
বন্দী ও নিশ্চল।
অনেকে চলছে ভারতের মুখে,
যুদ্ধ চলছে দেশে,
অজানা খন্ডে, অজানা এটাও,
লাশ কি আসবে শেষে!
কবে পাবে দেশ স্বাধীনতার আর,
না যদি পায় দেশ
৭ কোটিকে জবাই নয়ত,
জাতি করে নিঃশেষ।

আব্দুল আলিম মেজো ছেলে তার,

একদিন বড় হয়ে,
ঢাকায় তাহার বসতি হইলো,
মাঝে মাঝে যান গায়ে। 
বন্যায় যবে মানবতাতে 
চরম বিপর্যয়,
ত্রাণ নিয়ে হাতে তুলে বলিলেন,
আছি পাশে নেই ভয়। 
এলাকায় শত বিপর্যয়ে,
 যেই পাতিয়াছে হাত,
 দিয়েছে তাহারে অনুদান আর,
 পেয়েছে ধন্যবাদ।

আবুল হাসেম বয়েসী এখন,

হজ্ব করে ফিরে ঘরে,
মসজিদ এক নির্মাণ শেষে,
ইবাদত তাতে করে। 
৯০ সনে মসজিদখানা,
নির্মাণ করে তিনি,
ধর্মপ্রাণ আর মহান বলে,
গুণগ্রাহী সব ঋণী।

হাসেম দিঘির ঘাট হয়ে গেল,

কংক্রিট দিয়ে গড়া,
বসিয়া তাতে, দিনে আর রাতে,
জপিছে তাসবী ছড়া।

কনিষ্ঠ তার পুত্রখানি, 

রবিউল আলম নাম।
পিতাজি আমার, নামের পরেই
সশ্রদ্ধ সালাম। 
শিশুকাল তার চলছে এখন, 
দুষ্টামিতেও সেরা,
বন্ধু আছে এলাকার ছেলে,
মফি মুফাজ্জলেরা।
করিমন নেসা বসিয়া পাশে,
হাত বুলালেন চুলে,
পরিশ্রান্ত ছোট ছেলেটি 
প্রসন্নতায় দুলে!

বর্ষায় যদি ভিজে যায় মাঠ,

বিষন্নতায় মন,
লাগেনা ভাল দেখিতে ধারা,
সারাদিন সারাক্ষণ।

যুদ্ধ তখন শেষ,

পাকিস্তানের নখর ছাপিয়ে উঠলো বাংলাদেশ। 
যুদ্ধভারে জর্জরিত,
মানব জাতি আতঙ্কিত।
দেয়নি অস্ত্র সরকারে জমা,
এখনো থামেনি যুদ্ধ দামামা, 
হত্যা, লুটের রাজ্য এ দেশ,
কাটতে চায়না যুদ্ধের রেশ,
আসেনি এখনো শাসনের কাল,
মুজিব এলো,৭২ সাল।

إرسال تعليق

বিস্কুট নীতি
আপনার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক বিশ্লেষণ ও ব্রাউজিং আনন্দময় করতে আমাদের বিস্কুট নীতিতে সম্মত হোন।
ইস!
মনে হচ্ছে আপনার নেট সংযোগে সমস্যা হয়েছে। একটু চেক করবেন কী?
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.